Subject Review : Oceanography - সমুদ্রবিজ্ঞান

 Subject Review : Oceanography

সাবজেক্ট রিভিউ: সমুদ্রবিজ্ঞান

ইউনিটঃ এ


➽ যা পড়ানো হয়:

সাগর ও মহাসাগরের সুনির্দিষ্ট গুরুত্ব, সমুদ্রের খাঁড়ি, উপকূল এবং বালুচর। এছাড়াও পড়ানো হয় ইকোসিস্টেম ডায়নামিক্স, সমুদ্র তরঙ্গ, প্লেট টেকটোনিকস, সমুদ্রস্তরের ভূতত্ত্ব এবং সমুদ্রের ও তার চারপাশের ভূসম্পর্ক, এছাড়া আরো অনেক কিছুই..

.

➽ উচ্চ শিক্ষা:

অনার্সে বেশ কয়েকটি পাবলিক

বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বিষয়ে পড়ানো হয়। উচ্চশিক্ষায় দেশে তেমন একটা সুযোগ না থাকলেও USA, UK, অষ্ট্রেলিয়া, কানাডায় স্কলারশিপের সুযোগ রয়েছে।

.

➽ চাহিদা:

চ্যালেন্জিং পেশা হিসেবে গুরুত্ব বেশি। সমুদ্রের বিশাল জলরাশির নিচের সম্পদ জানা এবং সেসবের চাহিদা কিংবা মূল্যায়ন করার কাজগুলো করা হয় এই পেশায়।

জিওগ্রাফার, ওশানোগ্রাফার , মিটারোলজিস্ট হিসেবে সরকারি

বেসরকারি উভয় পর্যায়েই দিন দিন

চাহিদা বাড়ছে।

.

➽ চাকুরির সুবিধা:

চাকুরি মূলত রিসার্চভিত্তিক। মূল কাজটা সমুদ্র সার্ভে, নমুনা সংগ্রহ এবং তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ। কক্সবাজারের রামুতে

ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটে

রিসার্চার হিসেবে চাকুরির সুযোগ আছে। বিভিন্ন ইন্ড্রাস্টি, কনসাল্টিং ফার্ম , সমুদ্রভিত্তিক গবেষণাধর্মী অর্গানাইজেশনে থাকছে চাকুরির সুযোগ। তবে চাহিদাটা সবচেয়ে বেশি বাইরের দেশগুলোতেই। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্সে

ওশানোগ্রাফারদের বেতন চমকপ্রদ।

তবে সেটা নির্ভর করে অভিজ্ঞতা ও

শিক্ষণের উপর।

পৃথিবীর তিন ভাগ জল এক ভাগ স্থল। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ তাদের বর্তমান ও ভবিষ্যত্ চাহিদা মেটাতে তাকিয়ে আছে সমুদ্র বক্ষের সঞ্চিত সম্পদের দিকে। ২০৫০ সালে পৃথিবীর জনসংখ্যা হবে প্রায় ৯০০ কোটি। এ বিপুল জনগোষ্ঠীর খাবার যোগান দিতে তখন সমুদ্রের মুখাপেক্ষী হতে হবে। বিশ্ব অর্থনীতিতে সমুদ্র অর্থনীতি নানাভাবে অবদান রেখে চলেছে। প্রতিবছর ৩ থেকে ৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের কর্মকাণ্ড সংঘটিত হচ্ছে সমুদ্রকে ঘিরে। বিশ্বের ৪ শত ৩০ কোটি মানুষের ১৫ ভাগ প্রোটিনের যোগান দিচ্ছে সামুদ্রিক মাছ, উদ্ভিদ ও জীবজন্তুর, ৩০ ভাগ গ্যাস ও জ্বালানি তেল সরবরাহ হচ্ছে সমুদ্রতলের বিভিন্নগ্যাস ও তেল ক্ষেত্রে থেকে।

এক সময় সমুদ্র যাত্রা, সমুদ্র অভিযান, সমুদ্র বাণিজ্যের মধ্য দিয়ে দেশে দেশে মানুষ ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করত। বর্তমানে সমুদ্র সম্পদ আহরণের বিষয়টি অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। বৃদ্ধি পাচ্ছে সমুদ্র নির্ভরতা। সাগর ও মহাসাগর পৃথিবীর ৭২ শতাংশ দখল করে আছে এবং জীবমণ্ডলের ৯৫ শতাংশের উত্স হচ্ছে এগুলো। বিশ্বের ৮০ শতাংশ ব্যবসা-বাণিজ্য চলে সমুদ্র পথে। তা ছাড়া, মত্স্য ও সমুদ্রের অভ্যন্তরে তেল গ্যাসসহ খনিজ সম্পদের কারণে সমুদ্র ঘিরে গড়ে উঠেছে ব্লু ওসান ইকোনমি বা নীল সমুদ্র অর্থনীতি বা সংক্ষেপে সমুদ্র অর্থনীতি। জীবনধারণের উত্সমূল এ সাগর। জীববৈচিত্র্যের বিপুল খাদ্যভাণ্ডার এ বিশাল সমুদ্র। তাই সারা পৃথিবী ব্যাপী বর্তমানে ব্লু ইকোনমির ব্যাপারে আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে এবং এ বিষয়ে বিস্তর গবেষণা শুরু হয়েছে।

মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্র বিরোধ নিষ্পত্তির পর বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরের ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটারের বেশি রাষ্ট্রাধীন সমুদ্র, ২০০ নটিক্যাল মাইল একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং চট্টগ্রাম উপকূল থেকে ৩৫৪ মাইল পর্যন্ত মহীসোপানের তলদেশে সব ধরনের প্রাণিজ ও অপ্রাণিজ সম্পদের উপর সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে। বাংলাদেশের অধিকৃত এ বিশাল অঞ্চলের সামুদ্রিক মাছ হতে পারে বছরে বিলিয়ন ডলারের রফতানি পণ্য।বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের জলসীমায় রয়েছে সীমাহীন সম্পদ। শুধু আবিষ্কারের অপেক্ষায়। এসব সম্পদে দেশের অর্থনীতির চেহারা পাল্টে যাবে। উন্নয়নে আরও জোয়ার অনিবার্য। এছাড়া খনিজ, জ্বালানি সম্পদ প্রতিনিয়তই জমছে বঙ্গোপসাগরের বুকের ভেতর।বঙ্গোপসাগরের মোহনায় পলিমাটি জমছে বছরে ২০০ কোটি টন। টেনে আনছে নদী। এতে প্রচুর পরিমাণে খনিজ, জ্বালানি সম্পদ জমা হচ্ছে বঙ্গোপসাগরে।১৩ট

ি জায়গায় সোনার চেয়ে দামি বালি। যাতে মিশে ইলমেনাইট, গার্নেট, সিলিমানাইট, জিরকন, রুটাইল, ম্যাগনেটাইট। অগভীরে জমে ‘ক্লে’। যার পরিমাণ হিমালয়কেও হার মানায়। যা দিয়ে তৈরি হয় সিমেন্ট।

বাংলাদেশের আমদানি রফতানির ৯০ শতাংশই সম্পাদিত হয় সমুদ্র পথে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সমুদ্র নির্ভর। তা ছাড়া, বাংলাদেশেরর চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্র বন্দর দিয়ে প্রতিবছর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রায় ২ হাজার ৬ শত জাহাজের মাধ্যমে ২৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের আমদানি রফতানি হয়ে থাকে। এসব জাহাজ থেকে ভাড়া বাবদ আয় হয় ৬ বিলিয়ন ডলার। এসব জাহাজের অধিকাংশই বিদেশি মালিকানাধীন। ভবিষ্যতে এসব সমুদ্র বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার আয়ও বৃদ্ধি পাবে সে সঙ্গে বৃদ্ধি পাবে ব্যাপক কর্মসংস্থান।

বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, বঙ্গোপসারের নীচে পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্ জ্বালানিরতেল ও গ্যাস মজুদ রয়েছে যা আগামী দিনের জ্বালানি-রাজনীতি ও অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এ কারণে এ অঞ্চলটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এশিয়ার অন্যতম জ্বালানি শক্তি হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান করছে। পরবর্তী প্রাকৃতিক গ্যাসের সুপার পাওয়ার হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে দেশটি। শুধু গ্যাসই নয়, বঙ্গোপসাগরে ভারী খনিজের সন্ধান পাওয়া গেছে। ভারী খনিজের মধ্যে রয়েছে ইলমেনাইট, টাইটেনিয়াম অক্সাইড, রুটাইল, জিরকন, গার্নেট, কোবাল্টসহ অত্যন্ত মূল্যবান সম্পদ। এসব সম্পদ থেকে বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।

বাংলাদেশের গভীর সমুদ্র বন্দরের চিন্তা ভাবনা শুরু হয়েছে বহুদিন থেকেই। গভীর সমুদ্র বন্দর তৈরির সম্ভাব্য স্থান হিসেবে চারটি স্থানকে নির্বাচন করা হয়েছে, এগুলো হলো-চট্টগ্রাম, সোনাদিয়া, মাতারবাড়ী ও পায়রা। এ ধরনের একটি সমুদ্রবন্দর বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত জরুরি। নেদারল্যান্ডস, সিঙ্গাপুরের ইত্যাদি দেশের ব্যাপক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করার অন্যতম খাত হচ্ছে গভীর সমুদ্র বন্দর। তাত্ত্বিকভাবে সমুদ্রবন্দর হচ্ছেএমন একটি অর্থনৈতিক অবকাঠামো যা একটি দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে নানামুখী প্রভাব ফেলে। এটা রপ্তানিমুখী শিল্প গড়ে উঠা, কর্মসংস্থান ও রাজস্ব আয় বাড়াতে জোরালে ভূমিকা রাখে। এ ধরনের গভীর সমুদ্র বন্দর শুধু স্থানীয় বা জাতীয় নয়, আঞ্চলিক অর্থনীতির জন্যও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানই দেশটির জন্য এক বড় সুযোগের পরিস্থিতি তৈরি করেছে। বাংলাদেশের বঙ্গোপসাগরের এমন জায়গায় যার আশেপাশের দেশগুলোর অনেক অঞ্চল পুরোপুরি ভূমিবেষ্টিত, সমুদ্রের প্রবেশাধিকার নেই। বাংলাদেশের গভীর সমুদ্র বন্দর তৈরি হলে উত্তর-পূর্ব ভারতীয় রাজ্য, নেপাল, ভুটান, চীনের কুনমিং বা মিয়ানমারের শান ও রাখাইন রাজ্য এর সুফল পেতে কাজে লাগাতে পারে।

বাংলাদেশের সমুদ্র অর্থনীতির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ খাত হচ্ছে পর্যটন। পর্যটন একটা ব্যতিক্রম রপ্তানি বাণিজ্য। অন্যান্য বাণিজ্যে বিদেশে পণ্য প্রেরণ করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা হয়। কিন্তু পর্যটনের ক্ষেত্রে বিদেশিদের দেশ ভ্রমণে আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন ধরনের সেবা ও সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে অর্থ সমাগম করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা হয়। বৈচিত্র্যপূর্ণ প্রাকৃতিক ও ঐতিহাসিক নিদর্শন থাকার ফলে বাংলাদেশেও এ শিল্প বিকাশের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। ওয়ার্ল্ড ট্রাভেট অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিলের তথ্যানুযায়ী ২০১৩ সালে পর্যটন খাতে জিডিপির অবদান ছিল ৪ দশমিক ৪ শতাংশ। পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার দেশের গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন খাত। দেশের সমুদ্র তীরবর্তী অন্যান্য পর্যটন অঞ্চল হচ্ছে পতেঙ্গা, পারকী, টেকনাফ, সেন্টমার্টিন দ্বীপ, কুয়াকাটা, কটকা। নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত এখানে ২০ লাখ পর্যটক আসে যা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।

লবণ চাষের ক্ষেত্রেও সমুদ্র অর্থনীতির গুরুত্ব অপরিসীম। সমুদ্রের তীরবর্তী অঞ্চলগুলোতে লোনা পানিকে আটকে সূর্যের তাপ ব্যবহার করে প্রতিবছর প্রায় ১৫ লাখ টন লবণ উত্পাদন করা হচ্ছে। লবণ চাষে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও রফতানি করা সম্ভব বলে মনে করেন এখাতের উদ্যোক্তারা।

ভূ-কেন্দ্রিক উন্নয়ন কার্যক্রমের পাশাপাশি সমুদ্র ভিত্তিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড আমাদের সামনে খুলে দিতে পারে উনয়নের নতুন দিগন্ত। বাংলাদেশের এখন সময় এসেছে সমুদ্র অর্থনীতি নিয়ে ব্যাপক গবেষণা কার্যক্রমের। অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সমুদ্র ব্যাপক ভূমিকা পালন করতে পারে। এ জন্য প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন, প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত উন্নয়ন, সংশ্লিষ্ট এলাকার নিরাপত্তা জোরদারকরণ। সমুদ্র অর্থনীতি একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে এবং ব্যাপক কর্মসংস্থানে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

অদূর ভবিষ্যতে সরকারের " Ministry of Maritime Affairs" নামে আলাদা মন্ত্রনালয় গঠন করার পরিকল্পনা রয়েছে।

দেশের টেকসই সমুদ্র অর্থনীতি সাস্টেইনেবল ব্লু ইকোনমি প্রসারের লক্ষ্যে ' নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশবিদ্যালয়ের সমুদ্র বিজ্ঞান ও সামুদ্রিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা ইন্সটিটিউট ' স্থাপন প্রকল্প গ্রহন করা হয়েছে।

ধন্যবাদ সবাইকে

মাহি

ওশানোগ্রাফী,২য় ব্যাচ

Comments

Popular posts from this blog

সমাজকর্ম Social Work / সমাজকল্যাণ Social Welfare

Islamic History and Culture - ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি

Geography and Environment - ভূগোল ও পরিবেশ