Subject Review : Sociology
যে ৫টি কারণে পড়তে পারো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে
কখনও ভেবে দেখেছ, যে কম্পিউটার বা স্মার্টফোন ব্যবহার করে আমার এই লেখাটি দেখছ তার সাথে বিশ্ব রাজনীতির কী সম্পর্ক? এই স্মার্টফোন তোমার কথাবার্তা আচার আচরণ কীভাবে বদলে দিচ্ছে? তোমার কি মনে হয় না একজন ব্যক্তির সুইসাইডের জন্য সেই ব্যক্তি ছাড়াও পুরো সমাজই দায়ী? তুমি কি বুঝতে চাও চারপাশের মানুষগুলোকে নিয়ে গড়ে ওঠা এই জটিল সমাজটাকে?
তবে তোমার জন্যই একটি দারুণ বিষয় হতে পারে সমাজবিজ্ঞান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজে এই বিষয়টি এখন পড়ানো হয়ে থাকে।
সমাজবিজ্ঞান কী?
সমাজবিজ্ঞান কী, সেটা জানার আগে আমাদের বুঝতে হবে সমাজ কী। সোজা কথায় বলতে গেলে যখনই আমরা সমাজ কথাটি ভাবব তখন সেখানে একজনের বেশি মানুষ থাকবে। আর সমাজবিজ্ঞানের কাজ হলো সেই সমাজটিকে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে বিশ্লেষণ করা। গবেষণার মাধ্যমে সিদ্ধান্তে আসা।
এখন চলছে ভর্তি মৌসুম। তোমরা অনেকেই হয়তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়ে গেছ। হয়তো ভাবছ কোন বিষয় পড়বে। তোমাকে সাহায্য করার জন্যই এই লেখাটি লেখা। যে পাঁচটি কারণে তুমিও চারবছরের অনার্স কোর্সের জন্য বেছে নিতে পারো সমাজবিজ্ঞানকে। প্রথম চারটি কারণ সকল সমাজবিজ্ঞান শিক্ষার্থীর জন্যই প্রযোজ্য। আর পাঁচ নম্বরটি আমার বিভাগকে নিয়ে লেখা।
১. সমাজবিজ্ঞান বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি বা পদ্ধতির সাহায্যে সমাজকে বিশ্লেষণ করতে শেখায় :
সমাজবিজ্ঞানে বিভিন্ন থিওরেটিকাল পারস্পেক্টিভ আছে। এই থিওরেটিকাল পারস্পেক্টিভগুলো জটিল সমাজকে বোঝার জন্য খুবই কার্যকরী। প্রধানত তিনটা থিওরেটিকাল পারস্পেক্টিভ ব্যবহার করা হয়: ফাংশনালিজম, কনফ্লিক্ট থিওরি এবং সিম্বলিক ইন্টরেকশনিজম। এই তিন ধরনের পারস্পেক্টিভ ব্যবহার করেন সমাজবিজ্ঞানীরা। এক একটি ঘটনা বোঝার জন্য এক একটি পারস্পেক্টিভ সুবিধাজনক। তুমি চাইলে এর বাইরে নিজেও একটি পারস্পেক্টিভ গড়ে তুলতে পারো। তবে এর জন্য চাই প্রচুর পড়াশোনা। এই পারস্পেক্টিভগুলো অনেকটা বিভিন্ন রঙের চশমার মতো; যার এক একটি একেক দিকে নজর দেয়। ফাংশনালিস্টরা সমাজের যে দিকে নজর দেয় বা যেভাবে দেখে, কনফ্লিক্ট থিওরিস্টরা ঠিক সেভাবে দেখে না। আবার ফাংশনালিস্ট বা কনফ্লিক্ট থিওরিস্টরা পুরো সমাজকে একত্রে দেখার চেষ্টা করে। অন্য দিকে সিম্বলিক ইন্টারেকশনিস্টরা বোঝার চেষ্টা করে দৈনন্দিন জীবনের মানুষের মিথোস্ক্রিয়া। সমাজবিজ্ঞান একই সঙ্গে বৃহত্তর সমাজকে এবং আমাদের দৈনন্দিন জীবনের মিথোস্ক্রিয়াকে বোঝার চেষ্টা করে।
২. সমাজবিজ্ঞান অন্যের মতামতকে গ্রহণ করতে শেখায় :
সমাজবিজ্ঞান একটি সামাজিক বিজ্ঞান; যা পড়তে গিয়ে তুমি নানান ধরনের মতামত দেখতে পাবে। যার একেকটা অন্যটির সঙ্গে বিরোধী। এখানে কোনো মতামতকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে তার পেছনে থাকতে হবে যুক্তি, গবেষণা। কোনো বিষয়কে ক্রিটিকালি দেখতে হবে তোমাকে নানান দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে। অন্যের সাথে তোমার মতামত না-ই মিলতে পারে। কিন্তু তার সাথে মতামত না মিললে যে রেগে ওঠা কোনো সমাধান না; বরং যুক্তিতর্ক উপস্থাপন হতে পারে দারুণ একটি উপায়, তা তুমি জানবে সমাজবিজ্ঞান পড়লে।
৩. পেশার জগৎ :
সমাজবিজ্ঞান পড়ে সমাজবিজ্ঞানী হওয়া যায়। তবে সবাইকে যে সমাজবিজ্ঞানী হতেই হবে তা কিন্তু না। তুমি অন্য যে পেশায়ই যাও না কেন সমাজবিজ্ঞানের জ্ঞান সাহায্য করবে। সবখানেই, বিশেষ করে মানুষকেন্দ্রিক পেশাগুলোতে তোমাকে সমাজবিজ্ঞান দেখাবে নতুন দিগন্ত। সমাজবিজ্ঞান পড়ে একাডেমিশিয়ান হওয়া যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে বা কোনো প্রতিষ্ঠানে গবেষণা করা যায়। সমাজবৈজ্ঞানিক গবেষণা সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর নীতিমালা প্রণয়নে বেশ সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তবে এর বাইরেও সমাজবিজ্ঞানের জ্ঞান তোমাকে এগিয়ে রাখে। তুমি যদি সাংবাদিকতার দিকে যাও ভবিষ্যতে তাহলে সমাজবিজ্ঞান তোমাকে সমাজ সম্পর্কিত যে দক্ষতা অর্জনে সাহায্য করে, সে দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে সংবাদ সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করতে পারবে তুমি। লেখালেখিতেও মানুষ ও সমাজকে বোঝাটা দরকারি। সেজন্য একজন লেখকের ক্ষেত্রে সমাজবৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হতে পারে সহায়ক। এছাড়াও সমাজবিজ্ঞানীরা নানান পেশায় যুক্ত হচ্ছে যেখানে এই সমাজবৈজ্ঞানিক জ্ঞান তাদেরকে করছে লাভবান।
৪. ক্রমশই বিস্তৃতি লাভ করছে :
সমাজবিজ্ঞান বেশ নবীন একটা বিজ্ঞান। এটির শুরু খুব বেশি আগের না। তাই প্রতিদিনই এটি বিস্তৃতি লাভ করছে, হচ্ছে সমৃদ্ধ। পঞ্চাশের দশকে আসে স্যোশাল হিস্ট্রি নামক সমাজবিজ্ঞানের একটি শাখা। এই তো গত সত্তরের দশকে পরিবেশবিজ্ঞান আর সমাজবিজ্ঞান মিলে কটন আর ডানলপ নামক দুজন সমাজবিজ্ঞানীর হাত ধরে যাত্রা শুরু করল সোশিয়লজি অব এনভায়োরমেন্ট বা পরিবেশ সমাজবিজ্ঞান। প্রতিনিয়তই সমাজবিজ্ঞান সমৃদ্ধ হচ্ছে। এই পরিবর্তনশীল পৃথিবীতে সমাজবিজ্ঞানীরা প্রতিনিয়তই গবেষণার মাধ্যমে নতুন নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করছেন; চেষ্টা করছেন সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলার।
৫. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সমৃ্দ্ধ বিভাগ :
এবার বলি আমার বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে। সামজিক বিজ্ঞান অনুষদের পুরো পাঁচ নম্বরতলাটা জুড়ে এই সমাজবিজ্ঞান নামক বিভাগটি। এটি ড. এ কে নাজমুল করিম স্যারের হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত প্রথম সমাজবিজ্ঞান বিভাগ। এখানে আছেন বেশ কিছু অসাধারণ শিক্ষক যাদের সৌহার্দ্য পাওয়াটা আমি আমার জীবনের অন্যতম বড় পাওয়া বলে মনে করি। বিভাগে কম্পিউটার ল্যাব আছে। আছে বেশ সমৃদ্ধ লাইব্রেরি; যেখানে বসে বই পড়া সম্ভব। কিংবা পড়ার প্রয়োজনে করতে পারো কোনো বইয়ের পুরোটা বা তার অংশবিশেষ ফটোকপি। এই বিভাগে প্রচুর শিক্ষার্থী। তাই তুমি তোমার ব্যাচেই পাচ্ছ দুই শরও অধিক বৈচিত্র্যময় ছেলেমেয়েদের সাথে পরিচয়ের সুযোগ। তবে হ্যাঁ এই বিভাগের কিছু দুর্বলতা রয়েছে। এখানে দুই শর অধিক শিক্ষার্থীদের একত্রে ক্লাস হয়, যার ফলে অনেকসময় শিক্ষার্থীদের প্রতি শিক্ষকরা মনোযোগ দিতে পারেন না। এছাড়াও সিজিপিএ নিয়ে আছে অনেকের হা হুতাশ। এখানে সিজিপিএ অন্য বিভাগ থেকে কম ওঠে। কিন্তু আমি আশা করতেই পারি তুমি মনোযোগ দিয়ে পড়লে যে সিজিপিএ পাবে, তা দ্বারা তোমার পক্ষে অসাধারণ কিছু করা অসম্ভব নয়? কারণ প্রয়োজনীয় তথ্য এবং যুক্তি তোমার খাতায় থাকলে শিক্ষকরা নম্বর দিয়ে থাকেন এই বিভাগে। আর হ্যাঁ সমাজবিজ্ঞানের কোর্স ম্যাটেরিয়ালগুলো সাধারণত ইংরেজিতেই হয়। তাই মোটামুটি ইংরেজি লেখা এবং পড়ার দক্ষতা থাকাটা খুবই কার্যকরী। আর তোমরা যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বিভাগটিতে পড়ার সুযোগ পাবে বা পেয়েছ, তাদের পক্ষে ইংরেজির এই দক্ষতাটুকু অর্জন করা মোটেই কঠিন কিছু হবে না বলে আশা করা যায়। ইংরেজিতে ভালো হলে বিভাগের লেখাপড়া অনেকাংশেই সহজ হয়ে যায়।
ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় তোমার অবস্থান কত, সেটা না দেখে বোঝার চেষ্টা করো তুমি কোন বিষয়টা পড়ার ক্ষেত্রে কতটা প্যাশনেট। কেননা অপ্রিয় বিষয় চার বছর কষ্ট করে টানার চাইতে পছন্দের বিষয় পড়াটা ঢের ভালো।
Comments
Post a Comment